জীবনচক্র-ছন্দপতনে মৃত্যু যন্ত্রণা

চাহিদা মানব সৃষ্টির এক বিশাল প্রয়োজন। তিনবেলা খাওয়া, ভাল কাপড়, একটু ভাল থাকা, বেশি না হোক সামান্য সুখ, এক টুকরো জমিন, কিছু প্রাপ্তি, একটু ভালবাসা, একটা পরিবার….. এ সবই আমাদের প্রয়োজন। প্রয়োজন যে সব সময় পূরণ হয়, তা নয়।
চাওয়া-পাওয়াগুলো পূরণ হলে ভালো! না হলেই বিষাদে আমাদের মন ভারাক্রান্ত হয়।
পৃথিবীর বুকে অগনিত অসুখী মানুষ কেবল এই না পাওয়া থেকেই! চাওয়ার সবটুকু কি পাওয়া হয়? পাওয়া কি উচিত? পুরোটা পাওয়া হয়ে গেলেই মানুষ জীবনের উপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
ফাইবস্টার হোটেলে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ক’জন স্রষ্টাকে স্মরণ করেছে? বরং ফুটপাতে অভাবী মানুষের ভীরে স্রষ্টার নাম উচ্চারিত হতে শোনা যায় বেশি।
 
অপূর্ণতা সবার আছে। কেউ পরিপূর্ন নয়। পার্থক্য শুধু আমাদের দেখার ভুল, জানার ভুল, বিচারের ভুল।
নদীর ওপার দেখে এপার সব সময় বিচ্ছিরি লাগে। ওপারে গেলে বুঝা যায়, সব পার দূর খেকে একি দেখতে। নিজের ভাগে যা নির্দিষ্ট করা আছে, তার থেকে বেশি এক ফোঁটাও ভোগ করার সাধ্য নেই আমাদের। অন্যকে দেখে আফসোস করে কেবল দুঃখ বাড়ে।
 
ভালবাসার সম্পর্কগুলো খুব যে পোক্ত, তা নয়। কোন সম্পর্কই পোক্ত নয়, বরং তুলতুলে নাজুক, এক পলকেই যা ভাঙতে সময় লাগে না।
অনেক সময় আমাদের পাশের মানুষটিকে নির্বোধ, ভালবাসাহীন মনে হয়, ঠিক যেন আমাদের উল্টো! একই বিছানায় রাত পার করি কিন্তু কেন যেন বিষাদে মন ছেয়ে যায়!
তারপর একদিন , কোন এক উত্তুরে হাওয়ার মত এক অশনি সংকেত প্রতিবিম্ব হয়ে হঠাৎ এসে প্রাণে দোলা দিয়ে যায়, সম্মোহন জাগিয়ে মনে আমাদেরকে ধোঁয়াশায় ফেলে যায়। মনে হয়… মন্দ কি, যদি ভালো থাকার উপকরণ পেয়ে যাই?
তখন আমরা ভেসে যাই মোহে! ভেসে যাই নৈতিকতা-অনৈতিকতার বাঁধ পেড়িয়ে ভিন্ন এক জগতে।
 
কুমড়ো ডগার মত লিকলিকিয়ে বাড়তে থাকে লিপ্সা, অপ্রাপ্তি, শূন্যতার সবটুকু পূরণ করতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠি। বর্তমান পিছিয়ে যায় শত বছর পিছনে। অন্ধকার হাতরে ভবিষ্যৎ চলে আসে ঠিক ললাটের ডান পাশে। তারপর পাপ-তাপ ছুঁড়ে ফেলে আলিঙ্গনে বেঁধে নেই চোখ, সবটুকু দিয়ে, সবটুকু নিয়ে। অনৈতিকতা আর পাপ জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ভস্মীভূত ছাই হয়ে উড়ে যায় আকাশসীমায়!
চোখে আঙুল ঢুকিয়ে বাস্তবতা শিখায় ভুল। আর তার নিষ্ঠুর খেলায় মন ভেঙে লুটিয়ে পড়ে জমিনে। সমাজ হাসে তখন তারই জাত-গোত্রের পতনে।
 
এভাবেই অজান্তে মানব চামড়ায় দগদগে ঘা হয়। সে ঘা’য়ে মনুষত্ব পোড়া গন্ধ হয়। সে গন্ধ যখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, তখন বেঁচে থাকা হয়ে উঠে মৃত্যু যন্ত্রণা।