দ্রোহীকন্যা

 

আকাশনীলায় লালিত বহু বছরের দ্রোহ
একদিন প্রবল বর্ষণে ধরাশায়ী হলো ধরণীর জমিনে
দ্রোহবর্ষণে হাঁটুজল থৈ থৈ চারিধার
ছন্দের পতন মিশে একাকার তপ্ত রৌদ্রশিখায়
জলজ জ্বলন্ত আত্মা হয়ে,
বাষ্পীভূত হয়ে উঠলো দ্রোহীজল।
রক্তে ভেসে গেলো সে জলের দ্রোহ
জমিনের বুক চিরে অগ্নুৎপাত ঘটিয়ে জেগে উঠলো এক
দ্রোহীকন্যা।

 

জমিন ফেটে আর্তচিৎকারে হামাগুড়ি দেয়া দ্রোহীকন্যা….
দেখে সাম্যের পতাকা হাতে নর্দমায় ব্যাঙ্গাচি খেলা
দেখে জয়নুল আবেদীন এর রঙ তুলিতে দ্রোহ
ঘুর্ণায়মান জলতরঙ্গে মহাপ্রলয়ের দৌড়ঝাঁপ।
ক্রুব্ধ জনতার ভিড়ে মানবতা লাঞ্চিত
অবাক বিস্ময়ে দেখে সে,
অবহেলিত আকাঙ্ক্ষা বিদ্রুপ, কিশোরীর নগ্ন মরদেহে কীট
বাতাসে পোড়া গন্ধ, লাশে দরদাম
আরো জেনে নেয়,
নৈতিকতার গায়ে ছত্রাক জমা বিবর্ণ ইতিহাস।

 

আহত বোধ জেগে উঠতেই দেখে
ঘুণপোকা খুঁটে খায় মানুষের বিবেক
শিকারের খোঁজে এদিক ওদিক চতুর শৃগাল
শাসনতন্ত্রের নামে বিশ্বাসের গোপন ভাঙন!
দ্রোহীকন্যা এগোয় এক পা, দু’পা
হামাগুড়িতে অসমতল বক্ষের রক্তক্ষরণ,
দেখে সহস্রাব্দের নিষ্ঠুরতায় সন্নিকটে নিশ্চিত মরণ।

 

দ্রোহীর স্পর্ধায় ঘুর্ণায়মান জলতরঙ্গ স্থির হলে,
মহাপ্রলয়ের অপেক্ষায় পোড়া ক্ষত, গ্লানি বুকে
দূর কল্পলোক হতে সরল জোছনা হয়ে দ্রোহীকন্যা;
জ্বলে উঠে অনির্বাণ সত্য হয়ে।

তবে এখানেই শেষ নয়!
অন্যায়ের মুখোমুখি, ক্রমশঃ নিশ্চিত মরণ জেনেও
নব বিস্ফোরণে অগ্নুৎপাত ঘটুক কয়েকশত দ্রোহীর
পাহাড়ি হরিণ ঠিকানা খুঁজে নিক পর্বতশৃঙ্গে
দ্রোহীর গোপন অশ্রু গেঁথে থাকুক উর্ভর জমিনে।

বাষ্পীভূত হয়ে উঠুক আরো কয়েকশত দ্রোহী।