রোদেলার আজ আরো একটা অপেক্ষার দিন। অপেক্ষার বেলা শেষ হবে না জেনেও, সেই দুপুর থেকে পরিপাটি সেজে বসে আছে, আজ যে তার জন্মদিন।
রোদেলার স্মৃতিতে ভেসে চলেছে ছোটবেলার সেই ছোট্ট ছোট্ট আনন্দময় দিনগুলোর কথা। জন্মদিন এলেই ছোট একটা কেইক আনা হতো বাসায়। ভালোবেসে মা জামা কিনে দিতো। বন্ধুরা নিয়ে আসতো কলম, নোটবুক, গল্পের বই। নিন্মবিত্ত পরিবারে খুব ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করার রেওয়াজ না থাকলেও, ভালোবাসা ও স্নেহের মমতা সবটুকুই ছিল।
মনে পড়ে, জন্মদিনের দিন সকাল হতেই মা খুব যত্ন করে চুলে বিনুনি করে দিতো, সাথে প্লাস্টিকের ফুলযুক্ত ক্লিপ। বড় আপু তখনো স্কুলে যায়, তাই সব সময় একটা খাতা আর একটা কলম কিনে দিতো। সেগুলোই হতো রোদেলার খুশির কারণ।
রোদেলার বয়স তখন সতেরো, সবে স্কুল পাস করে বেড়িয়েছে। চোখে তার তখন রঙিন স্বপ্ন আকাশে উড়ার। কিন্তু পাখা মেলে উড়ার আগেই তাকে বন্ধী করে দেয়া হলো খাঁচায়। সেই খাঁচায় সমস্ত কিছুর মালিক হয়ে গেলো কোন এক অজানা মানুষ। মেয়েটি তার দুরন্তপনা শৈশব কৌশর উপভোগ করার সুযোগই পেলনা।
অনিচ্ছা সত্তেও অজানা মানুষটির হাত ধরে নতুন এক জগতে চলে এলো রোদেলা। মা বলে দিলো, ‘শোন মেয়ে! স্বামীর কথা শুনতে হবে,শ্বশুর-শাশুড়ির কথা শুনতে হবে। ওরাই এখন তোমার আপনজন।’
অপরিণত বয়সে বিয়ে হলেও রোদেলা খুব বুঝতে পারলো, তারাই তার সব কিছু এখন। গুছানো একটি সংসার গড়তে সকলের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠলো সে। সবার মন যুগিয়ে চলা, সেবাযত্ন করা হয়ে উঠলো তার নিত্যদিনের রুটিন।
বিয়ের প্রায় মাসখানেক পার হওয়ার পরই রোদেলা অজানা মানুষটিকে ভালবাসতে শুরু করলো। মানুষটি কখন বাড়ি ফিরবে, কি খাবে, কখন তাকে নিয়ে গল্প করবে, বাইরে ঘুরতে যাবে, শখের জিনিসটা কিনে দিতে চাইবে………ইত্যাদি নানান বিষয়গুলো রোদেলাকে ভাবাতে শুরু করলো।
কাজে যাওয়ার পরই রোদেলা অস্থির হয়ে উঠে। তার মন খারাপ হয়। অপেক্ষায় থাকে কখন মানুষটা ঘরে ফিরবে। প্রায়ই আশায় থাকে, মানুষটার হাতে চকোলেট দেখবে বলে।
কিন্তু হায়! গভীর রাতে মানুষটা কাজ শেষে বাড়ি ফিরে খালি হাতে। এসেই ক্লান্তি নিয়ে তড়িঘড়ি ঘুমাতে যায়। প্রায় রাতেই সে খেয়ে ফিরে বন্ধু-কলিগদের সাথে। এদিকে রোদেলা তার সাথে বসে খাবার অপেক্ষায় থাকে রোজ। এভাবেই দিনের পর দিন সোহাগ বঞ্চিত মেয়েটি রাতভর হাতের নখ খুঁটে চোখের কোলে কান্নার বালিহাঁস জমায়।
তারপর ভোর হতে আবারো একটি দিন অপেক্ষায় থাকে সে, হয়তো আজ মানুষটা হাতে করে প্রিয় খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে আসবে, কিংবা বাড়ি ফিরে জানতে চাইবে, রোদেলা ডিনার সেরেছে কিনা!
এমন কত ভাবনায় সময় পার হয়ে যায়, রোদেলা টেরই পায়না। তারপর এক সময় ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে মানুষটির পাশের বালিশটিতে।
রাত প্রায় ১টা। মানুষটা এখনো বাড়ি ফিরেনি। রোদেলা ভাবছে, আজকের রাতটা কি তবে এমনি হবে!
Post Views:
175
মেয়েটির পাশে শূন্যতা ঘুমায়
রোদেলার আজ আরো একটা অপেক্ষার দিন। অপেক্ষার বেলা শেষ হবে না জেনেও, সেই দুপুর থেকে পরিপাটি সেজে বসে আছে, আজ যে তার জন্মদিন।
রোদেলার স্মৃতিতে ভেসে চলেছে ছোটবেলার সেই ছোট্ট ছোট্ট আনন্দময় দিনগুলোর কথা। জন্মদিন এলেই ছোট একটা কেইক আনা হতো বাসায়। ভালোবেসে মা জামা কিনে দিতো। বন্ধুরা নিয়ে আসতো কলম, নোটবুক, গল্পের বই। নিন্মবিত্ত পরিবারে খুব ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করার রেওয়াজ না থাকলেও, ভালোবাসা ও স্নেহের মমতা সবটুকুই ছিল।
মনে পড়ে, জন্মদিনের দিন সকাল হতেই মা খুব যত্ন করে চুলে বিনুনি করে দিতো, সাথে প্লাস্টিকের ফুলযুক্ত ক্লিপ। বড় আপু তখনো স্কুলে যায়, তাই সব সময় একটা খাতা আর একটা কলম কিনে দিতো। সেগুলোই হতো রোদেলার খুশির কারণ।
রোদেলার বয়স তখন সতেরো, সবে স্কুল পাস করে বেড়িয়েছে। চোখে তার তখন রঙিন স্বপ্ন আকাশে উড়ার। কিন্তু পাখা মেলে উড়ার আগেই তাকে বন্ধী করে দেয়া হলো খাঁচায়। সেই খাঁচায় সমস্ত কিছুর মালিক হয়ে গেলো কোন এক অজানা মানুষ। মেয়েটি তার দুরন্তপনা শৈশব কৌশর উপভোগ করার সুযোগই পেলনা।
অনিচ্ছা সত্তেও অজানা মানুষটির হাত ধরে নতুন এক জগতে চলে এলো রোদেলা। মা বলে দিলো, ‘শোন মেয়ে! স্বামীর কথা শুনতে হবে,শ্বশুর-শাশুড়ির কথা শুনতে হবে। ওরাই এখন তোমার আপনজন।’
অপরিণত বয়সে বিয়ে হলেও রোদেলা খুব বুঝতে পারলো, তারাই তার সব কিছু এখন। গুছানো একটি সংসার গড়তে সকলের প্রতি মনোযোগী হয়ে উঠলো সে। সবার মন যুগিয়ে চলা, সেবাযত্ন করা হয়ে উঠলো তার নিত্যদিনের রুটিন।
বিয়ের প্রায় মাসখানেক পার হওয়ার পরই রোদেলা অজানা মানুষটিকে ভালবাসতে শুরু করলো। মানুষটি কখন বাড়ি ফিরবে, কি খাবে, কখন তাকে নিয়ে গল্প করবে, বাইরে ঘুরতে যাবে, শখের জিনিসটা কিনে দিতে চাইবে………ইত্যাদি নানান বিষয়গুলো রোদেলাকে ভাবাতে শুরু করলো।
কাজে যাওয়ার পরই রোদেলা অস্থির হয়ে উঠে। তার মন খারাপ হয়। অপেক্ষায় থাকে কখন মানুষটা ঘরে ফিরবে। প্রায়ই আশায় থাকে, মানুষটার হাতে চকোলেট দেখবে বলে।
কিন্তু হায়! গভীর রাতে মানুষটা কাজ শেষে বাড়ি ফিরে খালি হাতে। এসেই ক্লান্তি নিয়ে তড়িঘড়ি ঘুমাতে যায়। প্রায় রাতেই সে খেয়ে ফিরে বন্ধু-কলিগদের সাথে। এদিকে রোদেলা তার সাথে বসে খাবার অপেক্ষায় থাকে রোজ। এভাবেই দিনের পর দিন সোহাগ বঞ্চিত মেয়েটি রাতভর হাতের নখ খুঁটে চোখের কোলে কান্নার বালিহাঁস জমায়।
তারপর ভোর হতে আবারো একটি দিন অপেক্ষায় থাকে সে, হয়তো আজ মানুষটা হাতে করে প্রিয় খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে আসবে, কিংবা বাড়ি ফিরে জানতে চাইবে, রোদেলা ডিনার সেরেছে কিনা!
এমন কত ভাবনায় সময় পার হয়ে যায়, রোদেলা টেরই পায়না। তারপর এক সময় ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে মানুষটির পাশের বালিশটিতে।
রাত প্রায় ১টা। মানুষটা এখনো বাড়ি ফিরেনি। রোদেলা ভাবছে, আজকের রাতটা কি তবে এমনি হবে!
Published by HB Rita on Thursday, February 19th, 2015