মৃন্ময় ৭৭

ভালোবাসা নিয়ে কত কি করেছো
কত বিবাদ-বিরহবিচ্ছেদ শেষে হৃদয়ে ক্ষত
কত হল কাটা-ছেঁড়া, ফ্যাকাশে ভোর
এখন অনুভবের দৃষ্টিসীমায় ডাহুক ডেকে যায়
নগরীর পান্থনিবাসে সিগারেটের পোড়া ছাই, অযত্নে
এখন অনুভূতিতে হৃদয়ে রক্ত ঝরেনা
শিরিষের ডাল ছুঁয়ে বিবাগী পাখি সঙ্গীহীন,
তবু সহচর খুঁজেনা।

চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে অকস্মাৎ তুমি এসে বসো পাশে
নিমন্ত্রণ করিনি, কিভাবে এলে
এলেই যখন মাদুর পেতে কুশলাদী বিনিময় সেরে
হাত ছুঁতেই তুমি তাকালে
বললে, কেমন আছো?
“ভালো আছি”
তোমার চোখে বিড়াল পায়ে অন্ধকার নেমে এলো
বললে, মনে পড়ে না আমায়?
ভোলার বৃথা চেষ্টা করলে তো মনে পড়ে
মানুষ কি কখনো ভোলা যায়?

দিনের পর রাত আসে
নগরীর কোলাহল থেমে যায়
জানালা খুলতেই,
টুংটাং চায়ের কাপে শব্দ ভেসে আসে
মরণ কাকু হাকে,
কি রে ফটিক, রোজগার কত হলো?
থেমে থেমে এক কথা বলে যায় আট বছরের ফটিক
তিনশো বারো ট্যাকা মামু!
যে ছেলেটি এখনো চায়ের কাপে দেখে দু’মুঠো ভাত
সেও একদিন ভালোবাসবে, বিবাদে ঝরাবে
হাত কাটবে, রক্ত ঝরাবে
তারপর সময়ের সাথে বিচ্ছেদ শেষে
আবারো কারো প্রেমে পড়বে।

ট্রেইনে চড়ে জীবন দৌড়ায় এক স্টেশন ছেড়ে অন্য স্টেশনে
তড়িঘড়ি যাত্রী নেমে পড়ে গন্তব্যে
পথিমধ্যে চোখাচোখি-কথোপকথন
বাতাম বিক্রেতা ছেলেটি মুচকি হাসে,
“স্যার, এক্কেবারে বালু ভাজা বাদাম! নেন না দশ ট্যাকার”
হুইসেল বাজিয়ে ট্রেইন দৌড়ে যায় সমুখে
কে মনে রাখে যাত্রাপথে চিবুকের তিল-বাঁকা হাসি
বাদাম ভাজার সাথে বাড়তি উপকরণ লবন-মরিচ?
একগাদা আঁধার নিয়ে রাতের সাথে মিলিয়ে যায়
যাত্রীবাহী ট্রেইন।

জলের স্রোত কেবল আপন গতির সংঘাতেই ধ্বনি জাগায়
কুড়ি-বালি-ঢেউ উপকরণ মাত্র
আড়ালে লুকায়িত রহস্য সবই ধারার চাঞ্চল্য।
প্রাণস্রোতের বেগে তুমিও ভালোবাসলে
খুশীর কল্লোলে হৃদয় আন্দোলিত করলে
উপেক্ষা করার সাধ্য ছিলো কি?
কে পারে? মানুষ তো!

বহুদিন ভেবেছি চলে যাই শেষ রাতের ট্রেইন ধরে
জানালার বাইরে খোলা আকাশ যদি মিলে যায়
ট্রেইনের শিকল টেনে নেমে পড়ি সবুজ অরণ্যে
তারপর শুধু হেঁটেই যাই হেঁটেই যাই-গন্তব্যহীন।

কত কি ভাবনা আসে আজকাল বেকার মগজে
জীবনের শিকল তিনি কোন বগিতে রেখেছেন,
আজও জানা হলো না
কারো-ই জানা নেই
জানা হলে জীবনের শিকলে টান পরতো রোজ, কতশত।
আর তখন আঁধার কাটিয়ে রৌদ্দুর পৌঁছে যেত-আরেক জীবনে।
মৃন্ময়, দূরুভাগ্যক্রমে আজ মনে হয়
তুমি বৃষ্টিতে ভিজে যাও, শুকাবার রোদটুকু আমি দখলে রাখি।