জিদ

পৃথিবী যখন দুঃখ কাদায় মাখামাখি, তখনো আমি স্বৈরী জন্তুর মত দাপিয়ে যাই পৃথিবীর জমিন। ক্লান্তিহীন উটের ন্যায় মরুপ্রদেশে ঘানি টানি। গন্তব্য ছেড়ে ভুল করে আঁকাবাঁকা মেঠো পথের লালসা আমায় সন্মোহিত করেনি কখনো। জন্মের পর জেনেছি, পৃথিবী বড় বেইমান; জীবন এখানে বিশ্বাসঘাতকতা করে সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত! দাদীমা বলতেন, জীবন যুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার নামই “বেঁচে থাকা!”
মনে পরে একদিন, খুব অবুঝ বেলা, ভুল করে মায়ার বাসর দেখেছিলাম। ভয়ানক লোভে মায়া ছোঁয়ে দেখতে গিয়ে ভীষণ রকম হাত জ্বলে যায়! দাদীমা খুব করে বকে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “জাগতীক কোন কিছুই আমাদের নয়, সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে অহেতুক উপকরণে আমাদের বিভ্রান্তিতে রেখেছেন! যা আমার নয়, তাতে অধীকার কিসের?”
সেদিন বোঝেছিলাম, জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু অবধী মুখ চেপে বুক ঢেকে হেটে যাওয়াই সৃষ্টির কারণ।
অভিযোগ সেদিন ও করিনি, আজো নেই। নিঃশ্বাস আছে, তাতেই খুশী! সে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে বুকের ভিতর কেমন ভাঙচূর হয়; তা মূখ্য নয়। একদিন কেউ ছিল চিরচেনা সবুজে ঘাসফড়িং হয়ে, তাতেই খুশী! আজ মানুষটি কোথাও নেই! আজ সবুজের বুকে এক টুকরো নীল দ্বখন্ডিত হয়ে ছড়িয়ে পরে, তাতে কি! কেউ তো ছিল একদিন।
অসহনীয় চাপা ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে একদিন চলে যাবো! অভিযোগ করবো না। দেহের ভারসাম্য রক্ষায় মাটি গেড়ে নিজেকে পুঁতে ফেলবো গলা অবধী; অভিযোগ রাখবোনা। মানুষটির খুঁজে গন্ধ শুঁকে শুঁকে কুকুর হয়ে বসে পরবো রাস্তা-ঘাট, নর্দমার পাশে; তবু বুকের ভিতরের কোলাহল বাহির হতে দেবনা! অপ্রাপ্তির ভয়ানক অসুখে কষ্ট গিলে গলার কাছটায় দগদগে ঘা করে দেব; ভুল করেও চিৎকার করবোনা!
সৃষ্টিকর্তা যতটা ভালবেসে আমায় পৃথিবীর জমিনে পুতেছেন, ঠিক ততটা তেজ নিয়েই আমি উঠে দাড়াবো। হাতের তালু ফেটে একদিন জিদ ঝড়ে পরবে টুপুস! আমি অনড় তবু মুষ্টিবদ্ধ অভিমানে হেঁটে যাব দিগন্ত রেখায়!
পৃথিবী একদিন মানুষ হারাবে। সেদিন ও মৃত্যুর পর কারো কারো নিঃশ্বাস বেঁচে থাকবে।