লিখালিখির সুবাদে প্রায়ই পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখার অনুরোধ আসে। বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের একজন নবীন লেখক এমডি আল-আমীন অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন একটি বিষয় নিয়ে লিখার। আর তা হল- সরকারী চাকুরী ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি। বিষয়বস্তুর সাথে যুক্তিপূর্ণ পয়েন্টগুলো সাম-আপ করার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অগ্রসর গোষ্ঠীতে পরিণত করা। কিন্তু এই কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন আজ বহুদিনের। এক পক্ষ বলছে কোটা পদ্ধতির সংস্করণ দরকার। আরেক পক্ষ বলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরাই এর সংস্করণ চায় অর্থাৎ তারা কোটা পদ্ধতি সংরক্ষনের পক্ষে।
কোন একটি পক্ষ নির্ধারণের আগে আমাদের কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন।
কোটা পদ্ধতি কি?
দেশের সর্বোচ্চ পরীক্ষা বিসিএস এর মাধ্যমে নারী ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী যাতে সমান সুবিধা নিতে পারে এই লক্ষ্যে সরকার বিসিএসে উত্তীর্ণদের (প্রিলিমিনারী, লিখিত ও মৌখিক –তিনটিতেই উত্তীর্ণ) মধ্যে থেকে
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীর জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ মোট ৫৬ শতাংশ প্রার্থীদের চাকরী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে প্রাধিকার দিয়ে থাকেন, সেটাই কোটা পদ্ধতি।
কোটা পদ্ধতি বোঝতে আমাদের বিসিএস পরীক্ষা ও বিসিএস ক্যাডারদের সম্পর্কে জানতে হবে।
বিসিএস পরীক্ষা বা বিসিএস ক্যাডার কি?
BCS- Bangladesh Civil Service একটি পরীক্ষা পদ্ধতি যা মিডিওকার অর্থাৎ মডারেট কোয়ালিটি ব্রেইনের জন্য নির্ধারিত। আপনি রবার্ট ফ্রষ্ট বা আইনস্টাইন হলে আপনার জন্য এই পরীক্ষা না। এখানে ৩টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়- প্রারম্ভীক(Preliminary), লিখিত(Written), ও মৌখিক(viva)। সম্পূর্ণ পরীক্ষাটি শুরু থেকে শেষ ফলাফল পর্যন্ত সম্পন্ন হতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই বছর। সরকারী চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত এই বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি অনেকটাই ধৈর্য্য ধরে যুদ্ধের ময়দানে রেসিং ঘোরার মত। রেসে জিতে গেলেই আপনাকে হতে হবে সরকারী চাকর যেখানে আপনি শুনবেন, দেখবেন কিন্তু বলার বাক স্বাধীনতা থাকবেনা। অর্থাৎ, আপনি হয়ে গেলেন সরকারী চাকর এবং আপনাকে তাই করতে হবে যা সরকার চান। সরকারী কোন ভুল পদক্ষেপে শব্দটি পর্যন্ত করতে পারবেননা। তাহলেই বিপদ।
আর বিসিএস ক্যাডার মানে পিস্তল হাতে সন্ত্রাসী না। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যারা ক্যাডার পায় বা যাদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয় তাদেরকে বিসিএস ক্যাডার বলে।
যাই হোক, ফিরে আসি কোটা পর্বে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের “সরকারি নিয়োগ লাভের সুযোগের সমতা” শীর্ষক সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদে অতি স্পষ্ট করে বলা আছে: ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’
যদি ২৯(১) অনুচ্ছেদকে ফলো করা হয়, তবে এই কোটা পদ্ধতি অসাংবিধানিক। কেননা কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে বৈষম্য তৈরী করা হয়েছে।
আবার এই অনুচ্ছেদের ২৯ এর (৩) এর (ক) তে বলা হয়েছে,
‘নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে, রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’
অর্থাৎ, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে রাষ্ট্র এখানে তার সিদ্ধান্তে জনগনের হস্তক্ষেপে দাঁড়ি টেনে দিয়েছেন। এবং আমাদের দেশে মূলত কোটা প্রথার যাত্রা শুরু করা হয়েছে ২৯ (৩) এর (ক) অনুচ্ছেদের ফাক ফোকর দিয়েই যা আমাদের বেকার সমস্যা ও মেধার অবমূল্যায়নে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোটা পদ্ধতি সংস্করণ নিয়ে আন্দোলন কেন?
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কোটা পদ্ধতির প্রয়োগ নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়। নারীরা যেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে সেহেতু তাদের ১০ শতাংশ কোটা অন্তর্ভূক্ত করা যায়। উপজাতিরা যেহেতু পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী তাই তাদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা যুক্তিসঙ্গত। আর প্রতিবন্ধীদের মানবিক কারণেই ১ শতাংশ দেয়া যায়, বরং এই জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার পরিমান বাড়ালেও কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আপত্তি যা, তা হল ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-পুতিদের জন্য বরাদ্দ ৩০ শতাংশ নিয়ে।
আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে দেশের সকল জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে ছোট জেলা বা যে জেলার ছেলেরা বিসিএস খুব কম দেয় সেই জেলার কেউ ভাল রেজাল্ট করলে তাকে পছন্দের পদে সহজে নিয়োগ করাই হচ্ছে জেলা কোটা। এটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। জেলা কোটা বরাদ্দ রাখায় কেবল যে যোগ্য ও মেধাবীরা চাকুরীর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়, এই কোটা পদ্ধতির কারণে আমলাদের দুর্নীতিও অনেকটা বেড়ে গেছে। চাকরীর শুরুতে জেলা কোটায় নিয়োগ পেতে প্রার্থীদেরকে জেলাকোটা দাবীর বৈধতা প্রমান করার জন্য নিজ জেলার তরফ থেকে আবাসিক সনদপত্র জমা দিতে হয়। সেক্ষেত্রে যে দূর্নীতিটা হচ্ছে, তা হল এই কোটার সুবিধা ভোগ করতে এমন অনেকেই আছেন, যারা কোন জেলার বাসিন্দা না হয়েও বিভিন্ন অসৎ উপায়ে এবং অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে উক্ত জেলার সনদপত্র যোগাড় করছেন এবং বাগিয়ে নিচ্ছেন নানান সুযোগ সুবিধা।
তাই জেলা কোটা উঠিয়ে দেয়া সময়ের অপরিহার্য দাবী বলে অনেকে মনে করেন।
জেলা কোটার মত একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটাগুলোকেও অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে প্রায়ই সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষনায় জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ শতাংশ নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার অর্ধেকও পূরণ হচ্ছেনা। ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পাশাপাশি নাতি-পুতিদেরও যোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা নিজের জীবন বাজি রেখেছেন, যারা রক্তের বিনিময়ে প্রাণপন যুদ্ধ করে আমাদের একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন, তাদের রক্তের প্রতিদান আমাদেরকে দিতেই হবে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে মর্যাদা দেওয়া রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য। এবং বংশানুক্রমে তাদের বৈষয়িক সুবিধা দিলে তা হতে হবে একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা পর্যন্ত। কিন্তু সেই কোটা যদি হয় ৩০ শতাংশ, তবে তা বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
প্রকৃত পক্ষে যারা মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তানরা কত ভাগ এই কোটার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে সেটাও ভাবার বিষয়। কোটা প্রথা কতজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে, তা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের উত্তরাধিকারীদের দরিদ্র জীবন যাবন দেখলেই বলে দেয়া যায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উন্নয়নে এই কোটা পদ্ধতি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে।বহু মুক্তিযোদ্ধারা আজো বিনা চিকিৎসায় মরে। বহু মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধীকাররা এখনো রিককসা চালায়। বরং কোটা পদ্ধতির সুযোগে বহু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা টাকার বিনিময়ে বা প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহ করে বহু সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছে। তাদের উত্তরাধিকারীরা সেই সনদ ব্যবহার করে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সরকারের উচ্চ পদে চাকরি করছে। দৈনিক কালের কণ্ঠেসহ প্রথম আলো এবং বহু পত্রিকায় বহুবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে, পিতার ভুয়া সনদ ব্যবহার করে পুত্রের সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে নয়, বরং আবেগ দিয়ে তারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের সেই অবদানের দিকে লক্ষ্য রেখে রাষ্ট্র তাদের পরিবারকে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে বিশেষ সুযোগ দিলে সেটা আমাদের গর্ব। তাতে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা না। তবে সেটা কতটুকু? আর যাই হোক, ৩০ শতাংশ হতে পারেনা। আর তাদের নাতি-পুতিরা কেন সেই সুযোগ পাবে?
তারপরও হয়তো মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কেউ আপত্তি তুলতো না যদি বৈধ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা এর সুফল পেতেন। সরকারী চাকরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়নের পর দেখা যাচ্ছে দেশে “মুক্তিযোদ্ধা’র সংখ্যা বহুগুনে বেড়ে গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন বন্চনার শিকার। অসদুপায়ে নামা/দাদা/ পিতার ভূয়া সনদ বানিয়ে বহু স্বার্থান্বেষী মানুষ রাতারাতি বনে যাচ্ছেন আসল মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতি-সন্তান।
ফলে কি হচ্ছে?
মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছেনা। বাংলাদেশে বর্তমানে মেধা কোটা হচ্ছে ৪৪ শতাংশ আর আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন কোটা হচ্ছে ৫৬ শতাংশ। মেধাবীরা ভাল রেজাল্ট করেও কোটার বেড়াজালে চাকরীর সুযোগ পাচ্ছেনা। অন্যদিকে কম মেধাবীরা বিভিন্ন কোটার জোরে হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। এতে করে যুব সমাজে দেখা দিয়েছে হতাশা। বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্ব ও বিভিন্ন মাদকাশক্তিতে জড়িয়ে পড়ার প্রবনতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশুনা ছেড়ে হন্যে হয়ে ছুটছেন বিসিএস পরীক্ষার পিছনে। সেখানেও হতাশা তাদের পিছু ছাড়ছেনা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তারা হতাশায় ভুগছেন মেধার সঠিক মূল্যায়নে চাকরি পাবে কিনা ভেবে! নাকি তারা অপ্রতিরোধ্য কোটার বেড়াজালে আটকা পড়ে থাকবো! বিভিন্ন প্রকার কোটার কারণে আসল মেধাবিরা কোনঠাসা হয়ে আছে। ফলে তাদের মেধাকে জাতির উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছেনা।
সরকারি চাকরিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ পদ খালি, যার মধ্যে অনেক পদই কোটা ব্যবস্থার কারণে পূরণ হচ্ছে না। একদিকে লাখ লাখ বেকার জনগোষ্ঠী, আরেকদিকে লাখ লাখ পদ খালি; মাঝখানে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে আছে কোটা ব্যবস্থা।
সকল প্রকার নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা হচ্ছে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। কোটা হচ্ছে একটি সুযোগ যা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে অনুপ্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে। কোটা হচ্ছে ব্যতিক্রম পন্থা, মেধা হচ্ছে একটি নিয়ম।
বাংলাদেশ তার সামর্থ্যানুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে আসছেন। প্রয়োজনে এই উদ্দ্যেগ আরো সম্প্রসারণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের আমৃত্যু সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার সর্বাত্মক প্রয়াস রাষ্ট্র গ্রহণ করতে পারে। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীদের কোটা তাদের সন্তান পর্যন্ত বর্ধিত রাখলে এবং ৩০ শতাংশ কমিয়ে তার অর্ধেক করে দিতে পারলে বর্তমান মেধা কোটার ৪৪ শতাংশ বেড়ে হবে ৫৯ শতাংশ। আরো একটি বিষয়, বর্তমানে বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জেলা বলতে কিছু নেই। এটা বাতিল হয়ে গেলেই কোটাধারীর সংখ্যা কমে যাবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেধা কোটায় যোগ হবে আরো ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ + জেলা কোটার ১০ শতাংশ, মোট মেধা কোটা ৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৬৯ শতাংশ।
বিসিএস বা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যে কোটা প্রথা প্রচলিত আছে, তা নিয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। এই কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করলে অনেক মেধাবীর চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে তা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখছে না। বরং অনগ্রসর জনগোষ্ঠেীর লেবাসে অগ্রসর জনগোষ্ঠীই নানা অসদুপায়ে সেই সুযোগ ভোগ করছে। মেধার সঠিক মূল্যায়নে কোটা পদ্ধতি সংস্করণ একান্ত জরুরী।
Post Views:
563
কোটা ও মেধাঃ মুখোমুখী সাংঘর্ষিক
লিখালিখির সুবাদে প্রায়ই পারিবারিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখার অনুরোধ আসে। বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের একজন নবীন লেখক এমডি আল-আমীন অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন একটি বিষয় নিয়ে লিখার। আর তা হল- সরকারী চাকুরী ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি। বিষয়বস্তুর সাথে যুক্তিপূর্ণ পয়েন্টগুলো সাম-আপ করার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতি চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়ে অগ্রসর গোষ্ঠীতে পরিণত করা। কিন্তু এই কোটা পদ্ধতি নিয়ে আন্দোলন আজ বহুদিনের। এক পক্ষ বলছে কোটা পদ্ধতির সংস্করণ দরকার। আরেক পক্ষ বলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরাই এর সংস্করণ চায় অর্থাৎ তারা কোটা পদ্ধতি সংরক্ষনের পক্ষে।
কোন একটি পক্ষ নির্ধারণের আগে আমাদের কোটা পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য জানা প্রয়োজন।
কোটা পদ্ধতি কি?
দেশের সর্বোচ্চ পরীক্ষা বিসিএস এর মাধ্যমে নারী ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী যাতে সমান সুবিধা নিতে পারে এই লক্ষ্যে সরকার বিসিএসে উত্তীর্ণদের (প্রিলিমিনারী, লিখিত ও মৌখিক –তিনটিতেই উত্তীর্ণ) মধ্যে থেকে
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীর জন্য ১০ শতাংশ, জেলাভিত্তিক ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ মোট ৫৬ শতাংশ প্রার্থীদের চাকরী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে প্রাধিকার দিয়ে থাকেন, সেটাই কোটা পদ্ধতি।
কোটা পদ্ধতি বোঝতে আমাদের বিসিএস পরীক্ষা ও বিসিএস ক্যাডারদের সম্পর্কে জানতে হবে।
বিসিএস পরীক্ষা বা বিসিএস ক্যাডার কি?
BCS- Bangladesh Civil Service একটি পরীক্ষা পদ্ধতি যা মিডিওকার অর্থাৎ মডারেট কোয়ালিটি ব্রেইনের জন্য নির্ধারিত। আপনি রবার্ট ফ্রষ্ট বা আইনস্টাইন হলে আপনার জন্য এই পরীক্ষা না। এখানে ৩টি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়- প্রারম্ভীক(Preliminary), লিখিত(Written), ও মৌখিক(viva)। সম্পূর্ণ পরীক্ষাটি শুরু থেকে শেষ ফলাফল পর্যন্ত সম্পন্ন হতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই বছর। সরকারী চাকুরী পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত এই বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি অনেকটাই ধৈর্য্য ধরে যুদ্ধের ময়দানে রেসিং ঘোরার মত। রেসে জিতে গেলেই আপনাকে হতে হবে সরকারী চাকর যেখানে আপনি শুনবেন, দেখবেন কিন্তু বলার বাক স্বাধীনতা থাকবেনা। অর্থাৎ, আপনি হয়ে গেলেন সরকারী চাকর এবং আপনাকে তাই করতে হবে যা সরকার চান। সরকারী কোন ভুল পদক্ষেপে শব্দটি পর্যন্ত করতে পারবেননা। তাহলেই বিপদ।
আর বিসিএস ক্যাডার মানে পিস্তল হাতে সন্ত্রাসী না। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যারা ক্যাডার পায় বা যাদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয় তাদেরকে বিসিএস ক্যাডার বলে।
যাই হোক, ফিরে আসি কোটা পর্বে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের “সরকারি নিয়োগ লাভের সুযোগের সমতা” শীর্ষক সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদে অতি স্পষ্ট করে বলা আছে: ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’
যদি ২৯(১) অনুচ্ছেদকে ফলো করা হয়, তবে এই কোটা পদ্ধতি অসাংবিধানিক। কেননা কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে বৈষম্য তৈরী করা হয়েছে।
আবার এই অনুচ্ছেদের ২৯ এর (৩) এর (ক) তে বলা হয়েছে,
‘নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে, রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।’
অর্থাৎ, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে রাষ্ট্র এখানে তার সিদ্ধান্তে জনগনের হস্তক্ষেপে দাঁড়ি টেনে দিয়েছেন। এবং আমাদের দেশে মূলত কোটা প্রথার যাত্রা শুরু করা হয়েছে ২৯ (৩) এর (ক) অনুচ্ছেদের ফাক ফোকর দিয়েই যা আমাদের বেকার সমস্যা ও মেধার অবমূল্যায়নে বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কোটা পদ্ধতি সংস্করণ নিয়ে আন্দোলন কেন?
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কোটা পদ্ধতির প্রয়োগ নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়। নারীরা যেহেতু অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে সেহেতু তাদের ১০ শতাংশ কোটা অন্তর্ভূক্ত করা যায়। উপজাতিরা যেহেতু পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী তাই তাদের জন্য ৫ শতাংশ কোটা যুক্তিসঙ্গত। আর প্রতিবন্ধীদের মানবিক কারণেই ১ শতাংশ দেয়া যায়, বরং এই জনগোষ্ঠীর জন্য কোটার পরিমান বাড়ালেও কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। আপত্তি যা, তা হল ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-পুতিদের জন্য বরাদ্দ ৩০ শতাংশ নিয়ে।
আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণে দেশের সকল জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে ছোট জেলা বা যে জেলার ছেলেরা বিসিএস খুব কম দেয় সেই জেলার কেউ ভাল রেজাল্ট করলে তাকে পছন্দের পদে সহজে নিয়োগ করাই হচ্ছে জেলা কোটা। এটি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। জেলা কোটা বরাদ্দ রাখায় কেবল যে যোগ্য ও মেধাবীরা চাকুরীর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়, এই কোটা পদ্ধতির কারণে আমলাদের দুর্নীতিও অনেকটা বেড়ে গেছে। চাকরীর শুরুতে জেলা কোটায় নিয়োগ পেতে প্রার্থীদেরকে জেলাকোটা দাবীর বৈধতা প্রমান করার জন্য নিজ জেলার তরফ থেকে আবাসিক সনদপত্র জমা দিতে হয়। সেক্ষেত্রে যে দূর্নীতিটা হচ্ছে, তা হল এই কোটার সুবিধা ভোগ করতে এমন অনেকেই আছেন, যারা কোন জেলার বাসিন্দা না হয়েও বিভিন্ন অসৎ উপায়ে এবং অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে উক্ত জেলার সনদপত্র যোগাড় করছেন এবং বাগিয়ে নিচ্ছেন নানান সুযোগ সুবিধা।
তাই জেলা কোটা উঠিয়ে দেয়া সময়ের অপরিহার্য দাবী বলে অনেকে মনে করেন।
জেলা কোটার মত একইভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটাগুলোকেও অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে প্রায়ই সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষনায় জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০ শতাংশ নিয়োগের সুযোগ থাকলেও তার অর্ধেকও পূরণ হচ্ছেনা। ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পাশাপাশি নাতি-পুতিদেরও যোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা নিজের জীবন বাজি রেখেছেন, যারা রক্তের বিনিময়ে প্রাণপন যুদ্ধ করে আমাদের একটি স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন, তাদের রক্তের প্রতিদান আমাদেরকে দিতেই হবে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে মর্যাদা দেওয়া রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য। এবং বংশানুক্রমে তাদের বৈষয়িক সুবিধা দিলে তা হতে হবে একটা নির্দিষ্ট সীমারেখা পর্যন্ত। কিন্তু সেই কোটা যদি হয় ৩০ শতাংশ, তবে তা বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
প্রকৃত পক্ষে যারা মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তানরা কত ভাগ এই কোটার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে সেটাও ভাবার বিষয়। কোটা প্রথা কতজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে, তা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের উত্তরাধিকারীদের দরিদ্র জীবন যাবন দেখলেই বলে দেয়া যায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের উন্নয়নে এই কোটা পদ্ধতি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে।বহু মুক্তিযোদ্ধারা আজো বিনা চিকিৎসায় মরে। বহু মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধীকাররা এখনো রিককসা চালায়। বরং কোটা পদ্ধতির সুযোগে বহু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা টাকার বিনিময়ে বা প্রভাব খাটিয়ে মুক্তিযোদ্ধার সনদ সংগ্রহ করে বহু সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিচ্ছে। তাদের উত্তরাধিকারীরা সেই সনদ ব্যবহার করে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সরকারের উচ্চ পদে চাকরি করছে। দৈনিক কালের কণ্ঠেসহ প্রথম আলো এবং বহু পত্রিকায় বহুবার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে, পিতার ভুয়া সনদ ব্যবহার করে পুত্রের সরকারি চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন বিশেষ কোন সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে নয়, বরং আবেগ দিয়ে তারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের সেই অবদানের দিকে লক্ষ্য রেখে রাষ্ট্র তাদের পরিবারকে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে বিশেষ সুযোগ দিলে সেটা আমাদের গর্ব। তাতে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা না। তবে সেটা কতটুকু? আর যাই হোক, ৩০ শতাংশ হতে পারেনা। আর তাদের নাতি-পুতিরা কেন সেই সুযোগ পাবে?
তারপরও হয়তো মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কেউ আপত্তি তুলতো না যদি বৈধ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা এর সুফল পেতেন। সরকারী চাকরীতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাস্তবায়নের পর দেখা যাচ্ছে দেশে “মুক্তিযোদ্ধা’র সংখ্যা বহুগুনে বেড়ে গেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন বন্চনার শিকার। অসদুপায়ে নামা/দাদা/ পিতার ভূয়া সনদ বানিয়ে বহু স্বার্থান্বেষী মানুষ রাতারাতি বনে যাচ্ছেন আসল মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতি-সন্তান।
ফলে কি হচ্ছে?
মেধার সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছেনা। বাংলাদেশে বর্তমানে মেধা কোটা হচ্ছে ৪৪ শতাংশ আর আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন কোটা হচ্ছে ৫৬ শতাংশ। মেধাবীরা ভাল রেজাল্ট করেও কোটার বেড়াজালে চাকরীর সুযোগ পাচ্ছেনা। অন্যদিকে কম মেধাবীরা বিভিন্ন কোটার জোরে হাতিয়ে নিচ্ছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। এতে করে যুব সমাজে দেখা দিয়েছে হতাশা। বেড়ে যাচ্ছে বেকারত্ব ও বিভিন্ন মাদকাশক্তিতে জড়িয়ে পড়ার প্রবনতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশুনা ছেড়ে হন্যে হয়ে ছুটছেন বিসিএস পরীক্ষার পিছনে। সেখানেও হতাশা তাদের পিছু ছাড়ছেনা। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও তারা হতাশায় ভুগছেন মেধার সঠিক মূল্যায়নে চাকরি পাবে কিনা ভেবে! নাকি তারা অপ্রতিরোধ্য কোটার বেড়াজালে আটকা পড়ে থাকবো! বিভিন্ন প্রকার কোটার কারণে আসল মেধাবিরা কোনঠাসা হয়ে আছে। ফলে তাদের মেধাকে জাতির উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছেনা।
সরকারি চাকরিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ পদ খালি, যার মধ্যে অনেক পদই কোটা ব্যবস্থার কারণে পূরণ হচ্ছে না। একদিকে লাখ লাখ বেকার জনগোষ্ঠী, আরেকদিকে লাখ লাখ পদ খালি; মাঝখানে দেয়াল তুলে দাঁড়িয়ে আছে কোটা ব্যবস্থা।
সকল প্রকার নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা হচ্ছে প্রধান বিবেচ্য বিষয়। কোটা হচ্ছে একটি সুযোগ যা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলস্রোতে অনুপ্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে। কোটা হচ্ছে ব্যতিক্রম পন্থা, মেধা হচ্ছে একটি নিয়ম।
বাংলাদেশ তার সামর্থ্যানুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে আসছেন। প্রয়োজনে এই উদ্দ্যেগ আরো সম্প্রসারণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের আমৃত্যু সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার সর্বাত্মক প্রয়াস রাষ্ট্র গ্রহণ করতে পারে। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরীদের কোটা তাদের সন্তান পর্যন্ত বর্ধিত রাখলে এবং ৩০ শতাংশ কমিয়ে তার অর্ধেক করে দিতে পারলে বর্তমান মেধা কোটার ৪৪ শতাংশ বেড়ে হবে ৫৯ শতাংশ। আরো একটি বিষয়, বর্তমানে বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জেলা বলতে কিছু নেই। এটা বাতিল হয়ে গেলেই কোটাধারীর সংখ্যা কমে যাবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মেধা কোটায় যোগ হবে আরো ১০ শতাংশ। অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ + জেলা কোটার ১০ শতাংশ, মোট মেধা কোটা ৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ৬৯ শতাংশ।
বিসিএস বা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে যে কোটা প্রথা প্রচলিত আছে, তা নিয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে। এই কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করলে অনেক মেধাবীর চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য যে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, প্রকৃত অর্থে তা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখছে না। বরং অনগ্রসর জনগোষ্ঠেীর লেবাসে অগ্রসর জনগোষ্ঠীই নানা অসদুপায়ে সেই সুযোগ ভোগ করছে। মেধার সঠিক মূল্যায়নে কোটা পদ্ধতি সংস্করণ একান্ত জরুরী।
Published by HB Rita on Sunday, April 1st, 2018