আহসান হাবীব পেয়ারের যৌনাচার ও অর্থ আত্মসাদ

ধর্ম মানুষের এমন এক অনুভূতির নাম, যা সকল যুক্তি তর্কের উর্ধ্বে। ধর্মীয় অনুভূতি থেকেই শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়। আবার সে অনুভূতি থেকেই রক্তের বন্যাও বয়। যুগে যুগে ধর্মের বানী হয়েছে দুঃখ নিপীড়িত মানুষের বাঁচার একমাত্র সম্বল। আবার সেই ধর্মকে পুঁজি করেই ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কব্জা করে হয়েছেন বিত্তশালী, করেছেন নির্বিঘ্নে যৌনলীলা; সাধারণ মানুষ হয়েছেন তাদের প্রতারণায় বলির পাঠা।
দাড়ি রেখে, টাখনুর উপর কাপর মাথায় টুপি এবং চোখে সুরমা কাজল পড়া কোন মানুষ যখন প্রকাশ্যে, টিভি পর্দায়, পথে-ঘাটে অসহায় নিপীড়িতদের হাত ধরে আল্লাহ্ এর শান্তি বানী আওড়ান, পকেট থেকে হাজার টাকার নোট বের করে তাদের চিকিৎসায় ব্যয় করার আশ্বাস দেন, তখন কে না বিশ্বাস করবে? বরং বিশ্বাস না করাটাই তখন ইমান হারানোর মত ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়।
কিছুদিন পূর্বে আমি একটি আর্টিক্যাল লিখেছিলাম “ধর্মগুরু” নামে, যাতে দেখা যায় পর্দার আড়ালে ধর্ম নিয়ে ভারতের বহু ধর্মগুরুদের রমরমা ব্যবসার আলোকছবি। আজ আমরা জানব আমাদের নিজ দেশেরই তেমনি একজন “সমাজসেবক-ধর্মগুরু”কে, যিনি ধর্মকে পূঁজি করে মানবতাকে ঢাল স্বরুপ ব্যবহার করে অসহায় ও ধর্মভীরু সাধারণ মানুষকে বহুদিন ধরে প্রতারিত করে আসছেন নানান কলা-কৌশলে।

“আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা! আমি আহসান হাবীব পেয়ার, AHP TV, Dhaka Bangladesh।”– এই শব্দচয়নে অতি সুদর্শন, চোখে সুরমা কাজল, দাড়ি-আলখাল্লা-টুপি পরিহিত যিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে পরিচয় দেন একজন সাংবাদিক, সমাজকর্মী, ইসলামী সংগীতশিল্পী, পীর এমনকি অভিনেতাও, তিনিই আমাদের সেই সমাজসেবক-ধর্মগুরু আহসান হাবীব পেয়ার। ইতিমধ্যেই অনেকেই যমুনা টিভির 360 degree অনুসন্ধান টিম ও সাইবার ক্রাইম ইউনিটের দ্বারা তার গ্রেফতারের পর তার আসল পরিচয় জেনে গিয়েছেন।

ধর্ম ও মানবতার বুলি আওরিয়ে টাকার বান্ড্যাল হাতে কখনো তাকে দেখা গেছে বিরল অসুখে ভোগা কোন মানুষের পাশে, কখনো মুখমন্ডল পোড়া বীভৎস কোন নারী, কঙ্কালসার বিবস্ত্র শিশু, কখনো বা অসহায় ঘর্মাক্ত রিকসাচালকের পাশে। কৌশলে দিয়ে দিয়েছেন নিজের বিকাস নাম্বার ও ব্যাংক একাউন্ট। ক্যামেরার সামনে অসহায়দের হাতে টাকা তুলে দিয়েই তিনি আবেগময় জনতার বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন বার বার,”যদি আহসান হাবীব পেয়ার মানবতার স্বার্থে এতটা করতে পারেন, তবে আমাদের কি এগিয়ে যাওয়া কর্তব্য নয়?” আর তার সে কৌশলের ফাঁদে পড়ে দেশ বিদেশ হতে হাজারো মানুষ তাকে অর্থ পাঠিয়েছেন মানবতার সেবায় অংশীদার হতে। তার ডোনেটর ছিলেন বেশীর ভাগ মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ।
যমুনা টিভির অনুসন্ধানে উঠে আসে, এ পর্যন্ত বিভিন্ন রোগীর নামে গত আড়াই বছরে আহসান হাবীব পেয়ারের নামে জনতা ব্যাংকে ২৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা, ইসলামী ব্যাংকে ২৫ লাখ ও দুটি মোবাইল ব্যাংকে আরো প্রায় ৫০ লাখ টাকা জমা হয়। কিন্তু তার ইউটিউব চ্যানেল ঘুরে পাওয়া গেলো ৩৪ টি টাকা দেয়ার ভিডিও, যাতে দানের হিসেব মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার! বাকী টাকা কোথায়? বলা বাহুল্য, তার নামে একটি বেনামী ফ্ল্যাট ও দুটি গাড়ী রয়েছে।
এখানেই শেষ নয়।
জ্বীন-ভূত তাড়ানোর নামে ও ভালবাসার কথা বলে কৌশলে নারীদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে আহসান হাবীব পেয়ার পর্নোগ্রাফী বানাতেন। পরে তিনি উক্ত নারীদের কাছে অর্থ দাবি করতেন। অর্থ না দিলে সেই সব ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন। এক নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছে আহসান হাবীব। অন্য এক নারীর কাছ থেকে তিন লাখ টাকা দাবি করেন তিনি।
তার অসংখ্য অডিও রেকর্ড তার প্রমাণ। এমনকি তিনি নিজের মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করেছিলেন তার নিজেরই একটি নগ্ন গায়ে যৌন সঙ্গম ভিডিও। তার কম্পিউটারে পাওয়া যায় অসংখ্য পর্ণ ভিডিও ক্লিপ। তার কম্পিউটার থেকে অন্তত ২০টি ব্যক্তিগত ভিডিও উদ্ধার করেছেন ইনভেস্টিগেশন টিম।
নিচের লিংকটি দেখুন-
https://m.youtube.com/watch?v=lFlil5KfpdI

তার যৌনাচার ও টাকা আত্বসাদ নিয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন তার ক্যামেরাম্যান জাবেদ-
https://m.youtube.com/watch?v=Oe6QlapD5RY

শুধু তাই নয়, যিনি সর্বদা অনলাইনে দাড়ি-টুপি পড়ে ছবি আপলোড দিয়ে ধর্মের বুলি আওড়িয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতেন, তার এক অডিও রেকর্ডে তিনি বলেছেন,
“আমি জিন্দেগিতেও আল্লাহর পথে যাবো না, আল্লাহই আমার পথে আসবে।”
ধর্ম নিয়ে তার অডিও রেকর্ডিংয়ে তিনি এমন সব কটুক্তি করেছেন যা রীতিমত মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে। মুসলমানদের পবিত্র ভূমি নিয়ে কটাক্ষ তকে তিনি বলেছেন,
“সৌদীতে যারা ঢুকে, তারা ইমান আমল সব হারিয়ে ফেলে কারন পৃথিবীর নিকৃষ্টতম জায়গা হচ্ছে সৌদী!”

ফেইসবুক কল্যানেই আহসান হাবীব পেয়ার উঠে আসেন সবার নজরে। ফেইসবুক এমন একটা জায়গা, যেখানে ভাল কাজের নামে কখন যে কালো কুৎসিত মানুষগুলো সুযোগ বুঝে ঢুকে পড়ে মানুষের সরল বিশ্বাসে, তা বলা যায়না। ব্যক্তিগতভাবে পরিচয় না থাকায় ফেইসবুকে এসে মানুষের সরল অনুভূতিকে পুঁজি করে যে কেউই রাতারাতি হয়ে যায় সেলিব্রেটি। মানুষ পর্দার অন্তরালে রহস্য খুঁজেনা, মানুষ মানুষের বাহ্যিক প্রকাশভঙ্গিকে বিশ্বাস করে মনে প্রাণে। সে বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে আহসান হাবীব পেয়ারের মত অনেকেই হয়ে উঠেন সমাজকর্মী, পীর ও সেলিব্রেটি।

প্রতারণা, মিথ্যাচার, ওয়াদা খেলাপ, মুনাফিকি ইত্যাদি নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ। প্রতারণা মানব চরিত্রের একটি মারাত্মক রোগ। প্রতারণা বা কৌশলে অন্যকে ঠকানো কবিরা গুনা তথা হারাম। প্রতারণা মূলত মুনাফিকদের স্বভাব যা আল কোরআনে বর্ণিত হয়েছে। একজন সৎ ও পরহেজগার মানুষের মধ্যে প্রতারণা, ছলনা, ধোঁকা এবং বিশ্বাসঘাতকতার লেশমাত্র থাকতে পারে না। সূরা আল বাকারা : ৯ ও ১০ নাম্বার আয়াতে রয়েছে,
“এরা আল্লাহ ও তাঁর নেক বান্দাদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে, (মূলত এ কাজের মাধ্যমে) তারা অন্য কাউকে নয় নিজেদেরই প্রতারিত করছে। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারছে না। (আসলে) এদের কলবে রয়েছে ব্যাধি। (প্রতারণার কারণে) আল্লাহতায়ালা তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে তাঁর পক্ষ থেকে পীড়াদায়ক শাস্তি কেননা তারা মিথ্যা বলেছিল।”

আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমিন আমাদের সকলকে সুবুদ্ধি দান করুন। সুরক্ষিত রাখুন। আমীন।